ফেসবুক মার্কেটিং বর্তমানে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশের ব্যবসা সেক্টরে । আমরা আজ বাংলাদেশের ব্যবসায় ফেসবুক মার্কেটিং এর গুরুত্ব নিয়ে কথা বলব । আপনারা হয়তো সবাই জানেন যেকোন ব্যবসার জন্যই মার্কেটিং একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ । এক্ষেত্রে আমাদের ব্যবসা বৃদ্ধি করার জন্য অবশ্যই যেকোন একটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটিং চ্যানেল বা মাধ্যম বেছে নিতে হয় ।
মার্কেটিং কী?
প্রথমেই শুরু করি মার্কেটিং দিয়ে । আমরা মার্কেটিং বলতে কি বুঝি? সহজভাবে বললে মার্কেটিং হলো যেকোন কিছুর প্রচার করা । এটা সাধারণত ব্যবসার প্রচারের ক্ষেত্রে বলা হয়ে থাকে । তাহলে বোঝা যাচ্ছে আমাদের ব্যবসার প্রচার প্রসারের জন্য মার্কেটিং করতে হয় । ব্যবসাতে সাধারণত আমরা কোন প্রোডাক্ট বিক্রি করি কিংবা সার্ভিস দিয়ে থাকি নির্দ্রিষ্ট একটি ভোক্তা শ্রেণিকে । এক্ষেত্রে আমাদের ব্যবসার প্রচার করতে হয় যারা উক্ত ব্যবসার জন্য সঠিক অডিয়েন্স এর কাছে । কারণ যারা আপনার ব্যবসার প্রকৃত ক্রেতা বা ভোক্তা হতে পারবে তাদের নিকট যদি পৌছাতেই না পারেন তাহলে আপনার ব্যবসার কিন্তু কোন রেভেনিউ জেনারেট হবে না । একারণে মার্কেটিং কে আলাদা ভাবে গুরুত্ব দিতে হয় ।
আমরা জানলাম মার্কেটিং এর শর্ট একটা ব্যাখ্যা এবং এটার গুরুত্ব । তাহলে আমরা এখন কথা বলি মার্কেটিং চ্যানেল কী? মার্কেটিং চ্যানেল হচ্ছে মার্কেটিং করার মাধ্যম । অর্থাৎ আমরা কোন মাধ্যমে মার্কেটিং করব সেটা । যেমন, কেউ তার ব্যবসার বিজ্ঞাপন দিল নিউজ পেপারে, টিভিতে । এক্ষেত্রে নিউজ পেপার হচ্ছে একটা মার্কেটিং চ্যানেল । এগুলো হচ্ছে ট্রাডিশনাল মার্কেটিং চ্যানেল । যাইহোক আমাদের ফোকাস সেদিকে না । ডিজিটালি সেসব মাধ্যম সেগুলো নিয়ে আমরা কথাবার্তা বলব । তো ফেসবুক এর মাধ্যমে যদি মার্কেটিং করা হয় তাহলে ফেসবুক হচ্ছে একটা মার্কেটিং চ্যানেল । তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে আমরা কেন ফেসবুকে মার্কেটিং করব? এটাই আমাদের আর্টিকেলের মূল আলোচনার বিষয়বস্তু ।
ফেসবুক বিষয়ক কিছু পরিসংখ্যানঃ
Statistia এর তথ্যমতে বাংলাদেশে বর্তমানে ২০২০ সাল পর্যন্ত ফেসবুক ব্যবহারকারী ৩৯ মিলিয়ন । অর্থাৎ প্রায় ৪ কোটি । এটি একটা বড় ইতিবাচক দিক যারা ফেসবুকে নিজেদের ব্যবসার প্রচার করতে চাচ্ছেন । কারণ অনেক বড় সংখ্যক অডিয়েন্স আছে ফেসবুকে । আবার ফেসবুক যেহেতু ব্যবহার করা তুলনামূলক সহজ সেকারনে মানুষের কাছে সহজেই নিজের ব্যবসাকে উপস্থাপন করা সম্ভব এবং আপনার ব্যবসার ভাল ইমপ্রেসন বা ব্র্যান্ডিং করা যেতে পারে ।
NapoleonCat এর আরেকটি পরিসংখ্যান দেখুন-
এটা গেল একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক । এছাড়াও ফেসবুক মার্কেটিং চ্যানেল অন্যান্য যেকোন মার্কেটিং চ্যানেলের থেকেই বড় । এর খরচ অন্যান্য মাধ্যমের থেকে এখনো পর্যন্ত অনেক কম এবং ভাল ফলাফল পাওয়া সম্ভব ।
ফেসবুকে সাধারণত ডেটা ভিত্তিক ডিজিটাল মার্কেটিং করা হয় । সেটা কিভাবে? দেখুন ফেসবুকের কাছে কিন্তু বিভিন্ন প্রকার ডেটা আছে এর ব্যবহারকারীদের সম্বন্ধে । আপনি কোথায় থাকেন, বয়স কত, আপনি পুরুষ নাকি মহিলা, আপনাদের কোন কোন বিষয়ে ইন্টারেস্ট আছে, আপনি কি ধরণের বিষয়ে বেশি এক্টিভ এসমস্ত বিভিন্ন প্রকার ডেটা ফেসবুকের কাছে থাকে । কিভাবে ফেসবুক এসব ডেটা সংগ্রহ করে? এটা বড় আলোচনা অন্য দিনের জন্য তোলা থাকুক । গুরুত্বপূর্ণ আরো আলোচনা নীচে ।
ডেটা সংগ্রহ এবং এর সাথে মার্কেটিং এর সম্পর্কঃ
ফেসবুকে ডাটা পলিসি অনুসারে ফেসবুক আপনার থেকে আরো অনেক ধরণের ডাটা সংগ্রহ করে থাকে এবং সেগুলো ট্র্যাক করে । উদাহরণ স্বরূপ বলি, আপনি কোন পেজে লাইক দিচ্ছেন, কি ধরনের পোস্ট, ভিডিওতে এংগেজড (লাইক, কমেন্ট, শেয়ার) হচ্ছেন এসমস্ত ডেটা ট্র্যাক করে । এছাড়াও উপরে বর্ণিত যেসব ডেটার কথা বললাম । এগুলো ট্র্যাক করে রাখে । এসব ডেটা কেন ট্র্যাক করে রাখে? জানেন হয়তো একুশ শতকে ডেটা হচ্ছে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ । একারণে ফেসবুক এগুলো ট্র্যাক করে এবং বেঁচে দেয় 😀 আসলে সেরকম না । এগুলো হচ্ছে যারা ফেসবুকে এড দেয় তাদের জন্য সঠিক অডিয়েন্স নির্ণয় করার জন্য ব্যবহৃত হয় । এটার সম্বন্ধে নিচে আরেকটু ডিটেইলস বলছি । আশা করছি আপনারা বিরক্ত বা bore হচ্ছেন না ।
ফেসবুকের গুরুত্বপুর্ণ কিছু দিকের ইনফোগ্রাফিক্স টি দেখুন-
ফেসবুক বিজনেস কে সাধারণত কি বলা হয়?
ফেসবুকের মাধ্যমে বিজনেস করাকে এফ কমার্স বলা হয়ে থাকে । এটা সম্পুর্ণ অর্থ হচ্ছে ফেসবুক কমার্স (F-commerce or Facebook Commerce) । অনেকেই এটাকে Facebook Business বলে থাকেন । যাইহোক ফেসবুকে কিন্তু পেজ খোলা যায় । এর মাধ্যমে আপনি চাইলে নিজের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন । নিজের প্রোডাক্ট সাজানো, শপ খোলা, প্রোডাক্টের ছবি বা ভিডিও পাবলিশ করা, এড দেওয়া অর্থাৎ মার্কেটিং করা ইত্যাদি সব কিছুই করতে পারবেন । এছাড়াও সহজেই কাস্টোমারের সাথে যোগাযোগ বা কানেক্টেড থাকতে পারবেন । যদিও একটা ওয়েবসাইট থাকাটা রেকমেন্ডেড ।
এখন কথা হচ্ছে এগুলো ফেসবুক কেন করতে দেয়? সেটা অবশ্য আরেকটা ভিন্ন আলোচনা । তবে এটার মূল উদ্যেশ্য থাকে ফেসবুকের নিজের ব্যবসা বড় করা । আপনি নিজের ব্যবসার জন্য যত বেশি ফেসবুক ব্যবহার করবেন তত বেশি ফেসবুকের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন । এভাবেই তাদের মূল সার্ভিস এড প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা হবে । এর ফলে তাদের সার্ভিস আরো গ্রো করে ।
কিভাবে ব্যবসার প্রোমোট করা হয়ঃ
ধরুন আপনার একটা ফেসবুক পেজ/শপ অথবা ইকমার্স শপ/ওয়েবসাইট আছে । আপনি সেখানে গ্যাজেট বা কসমেটিক্স অথবা বিউটি প্রোডাক্ট বিক্রি করেন । তাহলে আপনার প্রোডাক্ট এর বিজ্ঞাপন ফেসবুকে দিবেন বলে ঠিক করেছেন । এখন ধরে নিচ্ছি আপনার কসমেটিক্স শপ থেকে কোন বিউটি প্রোডাক্ট বিক্রি করবেন । তাহলে এটার সাধারণত ভোক্তা কারা হবে? নারীরা, তাইতো? এরপর তাদের আনুমানিক বয়স কত থেকে কত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি সেটা নিশ্চই আপনি জানেন । এরপর যারা ফেসবুকে বিউটি বা সৌন্দর্য চর্চা বিষয়ক পেজে লাইক, কমেন্ট করেছে তারা এরকম বিউটি প্রোডাক্ট বিষয়ে আগ্রহ হবে বলে নিশ্চই ধরে নেওয়া যায় । নাহলে তারা এসবে এত আগ্রহী হয়ে লাইক কমেন্ট করত না । আপনি একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী হলেই বুঝে যাবেন ব্যপারটা । মানে আপনার যদি কোন পোস্ট ভাল না লাগে নিশ্চই লাভ রিয়্যাক্ট দিবেন না? 😛 এভাবেই একদম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিভিন্ন মেট্রিক থেকে আপনার ব্যবসার জন্য অডিয়েন্স নির্বাচন করা যেতে পারে । সেটা যেকোন ব্যবসা হতে পারে । তাহলে আপনার ব্যবসার সেলস বাড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে যেহেতু আপনি সব ঠিকঠাক করতে পারলে সঠিক অডিয়েন্সের নিকট পৌছিয়ে যাচ্ছেন ।
ব্যবসায় ফেসবুক মার্কেটিং এর গুরুত্ব (ক্যাম্পেইন বা এড):
প্রথম কথা হচ্ছে ফেসবুক মার্কেটিং এর গুরুত্ব ও সুবিধা এক পোস্টে লিখে শেষ করা যাবে না । তবে এটা বলতে পারি আপনার বিজনেসের সঠিক মার্কেটিং করতে হলে বিজনেস ম্যানেজার ব্যবহার করতে হবে । আর এডভান্স মার্কেটিং করতে হলে ক্যাম্পেইন করতে হবে । উদাহরণ স্বরূপ বলি, আপনি মনে করুন একটা এড একই ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ সংখ্যকবার দেখাতে চাচ্ছেন । এখন এটা কন্ট্রোল করা এবং ডেটা এনালাইসিস করে সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে কিন্তু ক্যাম্পেইন করেই করতে হবে । মার্কেটিং করে যদি আপনার কোন রিটার্ন না আসে তাহলে সমস্ত অর্থই পানিতে যাবে ।
নিম্নোক্ত কাজ গুলো যদি আপনার ব্যবসার জন্য করতে চান তাহলে অবশ্যই ফেসবুক এড তথা ফেসবুক মার্কেটিং কে বেছে নিতে হবে আপনাকে ।
এফ-কমার্স (F-commerce) সেলস: এফ-কমার্স বা ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ব্যবসা করতে হলে সঠিক অডিয়েন্সের কাছে ব্যবসার প্রোমোট এবং সেলস বাড়াতে হবে । এটি ফেসবুক মার্কেটিং এর মাধ্যমে করা সম্ভব ।
ই-কমার্স (E-commerce) সেলসঃ ইকমার্সের বিক্রি বৃদ্ধি করতে ও ব্যবসার প্রোমোট করতে ফেসবুক মার্কেটিং ভাল ভুমিকা রাখে বাংলাদেশের মার্কেটে ।
ম্যাসেজ ক্যাম্পেইনঃ আপনার যদি এফ কমার্স ব্যবসা থেকে থাকে । এবং আপনি ম্যাসেজ ক্যাম্পেইন, ম্যাসেঞ্জার মার্কেটিং করতে চান ।
অ্যাপ ইন্সটলঃ আপনার কোন অ্যাপ থাকলে এবং সেটার প্রোমোট করতে চাইলে ।
ওয়েবসাইট ট্রাফিকঃ আপনার কোন বিজনেস ওয়েবসাইট অথবা সার্ভিস ওয়েবসাইট থাকলে সেটার প্রোমোশনের জন্যেও এড ক্যাম্পেইন করতে হবে ।
শপ অর্ডারঃ ফেসবুক শপে আপনার কোন বিজনেস থাকলে সেটার প্রোমোশনের জন্য ।
ভিডিও ভিউ ও রিটার্গেটঃ আপনার কোন ভিডিও প্রোমোট করতে চাইলে এবং সেটার মাধ্যমে পরবর্তীতে রিটার্গেট করতে চাইলে ।
ওয়েবসাইট রিটার্গেটঃ ওয়েব সাইটে ভিজিটর নিয়ে এবং ওই ভিজিটরদেরকে আবার রিটার্গেট করার জন্য ।
ব্র্যান্ডিংঃ আপনি যদি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে আপনার ব্যবসাকে বড় করতে চান, প্রোপার ব্র্যান্ডিং করতে চান তাহলে ফেসবুক এড ক্যাম্পেইন অবশ্যই করতে হবে ।
ফেসবুক মার্কেটিং কত প্রকার?
ফেসবুক মার্কেটিং প্রধানত দুই প্রকার । অর্গানিক প্রমোশন ও পেইড প্রমোশন । ফেসবুকে আপনার বিজনেস প্রমোশন করার জন্য যদি কোন টাকা খরচ করতে না হয় । ফ্রিতেই করতে পারেন তাহলে সেটা হচ্ছে অর্গানিক ।
পেইড প্রমোশন বা এড কি সেটা তো বুঝতে পারছেন । আপনাকে যেটার জন্য টাকা খরচ করতে হবে । এটা ফেসবুকের মূল ব্যবসা ও সবাই নিজেদের ব্যবসার প্রমোশন পেইড এডের মাধ্যমেই করে থাকে কারণ এটাই স্ট্যান্ডার্ড যেকোন বিজনেসের জন্য । এটা জন্য আপনাকে প্রতিনিয়ত এড দিতে হবে ফেসবুকে । এই কাজটি করে থাকেন একজন ফেসবুক এড এক্সপার্ট ।
কোন একটা পণ্যের মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে কাস্টোমারকে যথাযথ ভাবে প্রস্তুত করে নিতে হবে অর্থাৎ উক্ত প্রোডাক্ট এর ভালোমন্দ জানাতে হবে । এভাবে একটি ফানেল তৈরী করে মার্কেটিং করলে ভাল রেজাল্ট আসবে । এজন্য সঠিকভাবে ব্যবসার মার্কেটিং করতে আপনি ফেসবুক মার্কেটিংকে বেছে নিতে পারেন ।
শেষ কথাঃ
এগুলো ছিল একদম বেসিক কথাবার্তা । ফেসবুক মার্কেটিং এর আরো বিভন্ন ধরণের মেথড আছে । একদম সিম্পল থেকে এডভান্স পর্যন্ত মেথড । একেক ব্যবসার জন্য একেক রকম উপায় অবলম্বন করতে হয় । আপনার ব্যবসার জন্য মেথড নির্বাচন করতে পারলে, সঠিকভাবে এড সেটাপ ও স্ট্র্যাটেজি ফলো করতে পারলে ভাল ফলাফল পাওয়া সম্ভব । এই আলোচনায় আমরা এডভান্স কথাবার্তা বলছি না, সামনে বলব ইনশাআল্লাহ । তবে আশা করছি আপনারা কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছেন এটা আপনাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে । ভাল থাকবেন সবাই অন্য একটি আলোচনা নিয়ে কথা হবে আরেকদিন ।
ধন্যবাদ ।
সহজভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে ।
ধন্যবাদ । বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেলাম ।
Thanks for reading.